এডরুক লিমিটেড, পাবনাঃ
শিল্প ও ব্যবসা বানিজ্যের ক্ষেত্রে পাবনা জেলা আদিকাল থেকেই প্রসিদ্ধ ছিল। অতি পুরাতনকাল হতেই এ জেলার বস্ত্র শিল্প প্রসিদ্ধ , গ্রামে গ্রামে বস্ত্র বয়নকারী হিন্দু মুসলমান উভয় জাতি সম্প্রদায় মিলে মিশে কাজ করে। হান্ডিয়ালের বিবরন প্রসংগে অবগত হওয়া যায় একমাত্র এখানেই কোম্পানি আমলের সমস্ত ভারতবর্ষের চার পঞ্চমাংশ রেশম আমদানি হত। পাবনার সাদুলনাপুর,সুজানগর,দোগাছি,শিবপুর,সিলিমপুরের সহ অনেক এলাকায় রয়েছে তাঁতী সম্প্রদায়। দোগাছির শাড়ী ও লুঙ্গী দেশ খ্যাত। পাবনা ব্যতীত অন্য কোথাও কাপড় প্রস্তত উপযোগী সূতা রংকারক দেখা যায় না। একটি সরকারী বিবরণী থেকে জানা যায় জেলার সাঁড়া , সাঁথিয়া , সুজানগর সহ অনেক এলাকায় ইক্ষু নির্ভর শিল্প রয়েছে। জেলায় প্রচুর পরিমানে সরিষা উৎপাদিত হয় , আর এর ফলে এখানে গড়ে উঠেছে অনেক তেল কল। পূর্বে খুলু সম্প্রদায় এই পেশার সাথে সম্পৃক্ত ছিল, যন্ত্রের সাথে প্রতিযোগিতায় তারা আজ বিলুপ্ত পায়।
বর্তমানে পাবনা জেলা শিল্প ক্ষেত্রে একটি অনগ্রসর অঞ্চল। তবে অন্যান্য কৃষিজাত পন্য মোটামুটি উৎপাদিত হয়ে থাকে। হোসিয়ারী তাঁত শিল্পে পাবনা জেলার যথেষ্ট সুনাম আছে। ঔষধ শিল্পেও উলেনখ করার মত। বর্তমানে পাবনা জেলাতে প্রায় ৫০০ হোসিয়ারী শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে। এ প্রতিষ্ঠানসমূহে প্রায় ১০০০০ শ্রমিক নিয়োজিত আছে। বর্তমানে হোসিয়ারী শিল্পের মূল উপাদান গার্মেন্টস এর ঝুট। এই ঝুট বাইরে চলে যাওয়ায় এর প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছে। লোড শেডিং আরেকটি প্রতিবন্ধকতা এই শিল্পের জন্য পাবনার তৈরী গেঞ্জি বর্তমানে নেপাল, ভারত, ভূটান, মালয়েশিয়া ও সিংগাপুরে ঢাকা মারফত রপ্তানী হচেছ। ঝুট রপ্তানীর চেয়ে গেঞ্জি রপ্তানী করে সরকার অনেক বেশী বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে আসছে। ঝুট রপ্তানী বন্ধের দাবী ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে। তারা সহজ শর্তে ঋণেরও দাবী করেছেন।
তাঁত শিল্পে পাবনা জেলা সমৃদ্ধশালী। এখানকার শাড়ী, লুংগী ও গামছা বিদেশে রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। তাই তাঁত শিল্পের ক্ষেত্রে সহজ শর্তে ঋন দিয়ে পাবনার তাঁত শিল্পকে আরো উজ্জীবিত করা প্রয়োজন। তাঁত শিল্প উজ্জীবিত হলে বহু কর্ম সংস্থানের সৃষ্টি হবে এবং শাড়ী, লুংগী, গামছা বিদেশে রপ্তানী করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সক্ষম। বস্ত্র শিল্পের মধ্যে পাওয়ার লুম ২৪টি, চিত্র রঞ্জন তাঁত ১৪১৮ টি, হস্তচালিত তাঁত ৩৭৮১ টি, গেঞ্জি তৈরী ৩৬৫ টি, সুতা পাকানো ২০টি, এমব্রয়ডারী ২৭টি।
পাবনা জেলাতে বেশ কয়েকটি ঔষধ কোম্পানী রয়েছে। বিশেষ করে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানী উলেনখযোগ্য। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানীর ঔষধ বিদেশে রপ্তানী করে বিশ্বের বাজারে বাংলাদেশ সুনাম অর্জন করেছে। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জিত হয়েছে। তাই পাবনার ঐতিহ্যবাহী এডরুক লিঃ ও ইউনির্ভাসেল ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানী সহ পাবনা জেলার অন্যান্য ঔষধ শিল্প প্রতিষ্ঠানকে যদি সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় আরো উন্নত করা যায় তাহলে পাবনা জেলা ঔষধ শিল্পে যথাযথ ভূমিকা রাখবে এবং এতে করে বহু কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এডরুক লিঃ এর ১৯৪৮ সনে কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন মরহুম আব্দুল হামিদ খাঁন। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক মরহুম আঃ হামিদ খান সাহেবের সুষ্ঠু পরিচালনায় ১৯৬৭ সন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়ে স্বর্ণ পদক প্রাপ্ত হয়। ব্যবস্থাপনা পরিচালক্ এর মৃত্যুর পর একের পর এক নানা হাত বদলের পর এবং ১৯৮২ সালের ঔষধ নীতির কারণে এডরুকের করুন পরিনতি ঘটে। ১৯৬৭ হতে ১৯৯৯ সন পর্যন্ত নানা প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে অনেক বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে বর্তমানে একটি সন্তোষজনক অবস্হায় এসেছে।
খ) স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসস লিমিটেডঃ
স্কয়ার গ্রুপের প্রথম প্রতিষ্ঠান স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। ১৯৫৮ সালে এর কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৭৮ সনে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস ঔষধ রপ্তানী শুরু করে। ঔষধের কাঁচামাল তৈরীর জন্য পাবনায় স্কয়ার কেমিক্যাল ডিভিশন নামে নতুন একটি ইউনিট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস ৯০০১ঃ২০০৯ ISO সনদ পত্র ছাড়াও MHRA UK Certificate অর্জন করেছে যা ইউরোপীয় ঔষধ রপ্তানীর জন্য গুরুত্ববহ। এছাড়া স্কয়ার ফার্ম FDA Certificate অর্জনের পথে রয়েছে যার ফলে আমেরিকার বাজারে স্কয়ারের মোট কমীর সংখ্যা ২৫০০০। স্কয়ার পাবনা তথা সমগ্র দেশের কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
গ) ইউনিভার্সাল লিমিটেডঃ
১৯৬৭ সনে ইউনিভার্সাল ল্যাবরেটরিজ প্রথম প্রতিষ্টিত হয়। ১৯৯৮ সনে মালিকানার পরিবর্তন হওয়ার পর ২০০০ সনে ইউনিভার্সল ফুড লিমিটেড এবং ইউনিভার্সল ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানী) একই সাথে যাত্রা শুরু করে। এই প্রতিষ্ঠান গ্রুপের বর্তমান জনবল ১০০০। কিছু ফুড আইটেম সৌাদি আরবে এবং ইন্ডিয়ারা রপ্তানী হয়েছে বলে জানা যায়।
ঘ) বেঙ্গল মিটঃ
২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত গরু ও ছাগলের মাংস কিনে স্বয়ংক্রিয় প্রসেসে জবাই করে প্যাকেট করে মাংস ঢাকায় এবং বিদেশে রপ্তানী করে। প্রতি দিনের উৎপাদন ২৫০০ কেজি। বাংলাদেশে এ ধরণের প্রতিষ্ঠান একটিই। এখানে শতাধিক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে, অনেক লোক গরু এবং ছাগল পালনের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে।
ঙ) পাবনা সুগার মিলঃ
ঈশ্বরদী উপজেলায় পাবনা সুগার মিল্স লিঃ নামে একটি চিনির কারখানা আছে। এখানে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত আখ থেকে চিনি তৈরী হয়।
পাবনা জেলাতে ক্ষুদ্র মাঝারী শিল্পের বহু উদ্যোক্তা রয়েছে। ওরিয়েনটেশন কোর্সের মাধ্যমে জনগনকে সচেতন করে ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্প প্রতিষ্ঠানে আগ্রহী করে তোলা প্রয়োজন। ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্প গড়ে উঠলে বহু কর্ম সংস্থানের সৃষ্টি হবে। বন্ধ হয়ে যাওয়া পাবনার ক্যালিকো কটন মিলস, ঈশ্বরদী আলহাজ্ব^ টেক্সটাইল মিলস এবং নর্থ বেঙ্গল পেপার মিল সরকারী ব্যবস্থাপনায় যৌথভাবে অর্থ বিনিয়োগ করতঃ মিল তিনটি পুনরায় চালু করা গেলে বহু মানুষেযর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে, দেশ এগিয়ে যাবে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে।
ঈশ্বরদী ইপিজেড পুর্নাংগভাবে চালু করা দরকার। এখানে শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনে গ্যাস সহ নানাবিধ সুযোগ সুবিধা রয়েছে। ঈশ্বরদী ইপিজেডে গ্যাস সহ সকল সুবিধা বিদ্যমান আছে হেতু ঈশ্বরদী ইপিজেডে এগ্রোবেইজড ইন্ডাষ্ট্রিসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান ন্থাপন করা প্রয়োজন। তাছাড়াও যেহেতু উওরাঞ্চলে পর্যাপ্ত পরিমান কৃষিজপন্য উৎপাদিত হয়ে থাকে সেহেতু ঈশ্বরদী ইপিজেডে একটি সার কারখানা স্থাপন করা প্রয়োজন। পূর্বাঞ্চল থেকে সার আনতে পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। ফলে কৃষি ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়ে এবং কৃষিজ পন্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়।
ঈশ্বরদী বিমান বন্দরটি চালু করা একান্ত প্রয়োজন। বিমান বন্দরটি চালু করলে দেশী বিদেশী বিনিয়োগকারীরা ঈশ্বরদরী ইপিজেডে নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে আগ্রহী হবেন। নতুন নতুন শিল্প কারখানা স্থাপিত হলে বহু লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
পরিশেষে ঈশ্বরদী ইপিজেড ও ঈশ্বরদী বিমান বন্দরটি চালু করলে এবং হোসিয়ারী ; তাঁত ; ঔষধ ক্ষুদ্র মাঝারী ও আবাসন শিল্পসহ নানাবিধ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে ও ক্যালিকো কটন মিল এবং ঈশ্বরদী আলহাজ্ব টেক্টাইল মিল চালু করলে পাবনা জেলা শিল্পে আরো সমৃদ্ধশালী হবে। এতে করে পাবনা জেলার সামগ্রিক উন্নয়ন সাধিত হবে।
পাবনার শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা
ক) জেলায় বিদ্যমান শিল্পের তথ্যাদিঃ
বৃহৎ শিল্পের উপখাত ভিত্তিক বিবরণ
মাঝারী শিল্পে খাত ভিত্তিক বিবরণ
চিনি কল
০১টি
বস্ত্র কল
০২টি
কাগজ কল
০১টি
রসায়ন শিল্প (সিমেন্ট ফ্যাক্টরী সহ)
০৬ টি
সুতা কল
০১টি
খাদ্য ও খাদ্যজাত (দুগ্ধ প্রত্রিুয়াজাতকরণ)
০৩টি
ঔষধ শিল্প
০৩টি
প্রকৌশল শিল্প (রি-রোলিং)
০১টি
কোল্ড ষ্টৌারেজ
০৩টি
মোট=
০৬টি
মোট =
১৫টি
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন